সর্বজনীন বনাম সার্বজনীন / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘সর্বজনীন’ ও ‘সার্বজনীন’ দুটোই শুদ্ধ কিন্তু অর্থ ভিন্ন। অনেকে ‘সর্বজনীন’ অর্থে ‘সার্বজনীন’ লিখে থাকেন। অর্থ না-জানার জন্য এমন হয়ে থাকে। লেখার সময় কোনটি লিখবেন, এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হলে ‘সর্বজনীন’ লিখুন।তা হলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা বহুলাংশে কমে যাবে। কারণ, সাধারণত যে অর্থে ‘সার্বজনীন’ লেখা হয় নব্বই ভাগ ক্ষেত্রে সেটি ওই অর্থ-প্রকাশে যথোচিত নয়, বরং ‘সর্বজনীন’ শব্দই উপযুক্ত।
‘সর্বজনীন’ শব্দের আভিধানিক অর্থ, সর্বসাধারণের জন্য অনুষ্ঠিত, বারোয়ারি, সকলের জন্য মঙ্গলকর বা কল্যাণকর, সবার জন্য হিতকর, সবার মঙ্গলের জন্য কৃত, সকলের জন্য উদ্দিষ্ট। যেমন : ভালোবাসা সর্বজনীন বিষয়। ফল সর্বজনীন খাদ্য। মানবাধিকার সর্বজনীন অধিকার হিসেবে স্বীকৃত।‘সার্বজনীন’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘সবার মধ্যে প্রবীণ, জ্যেষ্ঠ’। যেমন: ‘ জিম্বাবুয়ের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রবার্ট মুগাবে ( জন্ম ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ) সার্বজনীন নেতা।’ [ কারণ ৯৪ বছর বয়সি এ রাষ্ট্রনায়কের চেয়ে অধিক বয়স্ক নেতা বিশ্বে আর কেউ নেই।] অবশ্য প্রবীণ শব্দটি ‘শ্রেষ্ঠ’ অর্থ প্রকাশে ব্যবহার করা হলে সেক্ষেত্রে ‘সার্বজনীন’ শব্দের অর্থ সম্প্রসারিত হয়। যেমন : ‘নেলসন মেন্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার সার্বজনীন নেতা। কিন্তু ‘শ্রেষ্ঠ’ অর্থে ‘সার্বজনীন লেখা সমীচীন নয়। কারণ ‘শ্রেষ্ঠ’ প্রকাশের জন্য বাংলায় অনেক যুতসই বিকল্প শব্দ রয়েছে। ফলে, ‘নেলসন মেন্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বজনীন নেতা ‘ লেখাই বিধেয়। সবার জন্য প্রযোজ্য, সবার জন্য হিতকর প্রভৃতি অর্থে ‘সার্বজনীন’ লেখা ঠিক নয়।
‘সার্বজনীন দুর্গাপূজায় আপনাকে স্বাগত’। এর অর্থ সবার মধ্যে প্রবীণ বা সবার মধ্যে জ্যেষ্ঠ দুর্গাপূজায় আপনাকে স্বাগত। কথাটির যৌক্তিকতা কতটুকু তা পরের বিষয়। তবে এখানে ‘সার্বজনীন’ বলার চেয়ে, ‘সর্বজনীন’ বলাটাই যে উত্তম হতো - এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সুতরাং ‘সবার জন্য হিতকর, সবার জন্য প্রযোজ্য বা সবার জন্য কল্যাণকর প্রভৃতি অর্থে সার্বজনীন তথা ‘সকলের মধ্যে প্রবীণ বা জ্যেষ্ঠ’ বলা বিধেয় নয়। তাই সবার জন্য হিতকর, সবার জন্য প্রয়োজ্য, সবার জন্য কল্যাণকর প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে ‘সর্বজনীন’ লেখা উচিত। যেমন : সর্বজনীন উৎসব।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন