Posts

Showing posts from March, 2017

তৈরি ও তৈরী / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘তৈয়ার’ থেকে তৈরি। ‘তৈরি’ বিশেষ্য ও ক্রিয়া উভয়রূপে ব্যবহার হতে পারে। তবে ক্রিয়া হিসেবে সমধিক ব্যবহৃত। যেমন : সে বাড়ি তৈরির কাজে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। মা আমাদের জন্য সেমাই তৈরি করছেন। অন্যদিকে ‘তৈয়ারী’ থেকে ‘তৈরী’। ‘তৈরী’ বিশেষণ পদ। এটি ‘খ্রিষ্টাব্দ’ শব্দের মতো আত্তীকৃত শব্দ। তাই উৎস বিদেশ হলেও দীর্ঘ-ঈকার। প্রয়োগ : হাতে-তৈরী সৈমাই খেতে বেশ লাগে। জাপানের তৈরী গাড়ি বাংলাদেশে প্রচুর পাওয়া যায়। যেহেতু ‘তৈরি’ ও ‘তৈরী’ ভিন্ন অর্থ বহন করে তাই বাক্যে শব্দ দুটো ব্যবহারের সময় সাবধানতা আবশ্যক। জামিল চৌধুরী সম্পাদিত বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে (২০১৬) হাজার হাজার শব্দের ন্যায় ‘তৈরী’ শব্দটিও বাদ পড়েছে। অসম্পূর্ণ ও অাংশিক কার্যকর এ অভিধানটিতে শব্দ খুঁজতে গেলে না-পাওয়ার সম্ভবানাটাই বেশি থাকে। অবশ্য অভিধানে না-থাকলে শব্দটি নেই বা অশুদ্ধ এমন মনে করার কোনো অবকাশ নেই। গবেষকদের মতে, বাংলায় দুই লাখের কাছাকাছি শব্দ আছে। অভিধানসমূহে এ পর্যন্ত আশি হাজারের বেশি পাওয়া যায না। তার মানে বাকি শব্দগুলো কি অশুদ্ধ? বাকি অংশ গবেষণা, প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন, মাতৃভাষা জ্ঞান, প্রাত্যহিক প্রয়োজন, শুদ্ধ বানান চ

প্রদোষে প্রাকৃতজন / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘প্রদোষ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ সায়াহ্নকাল, সন্ধ্যাবেলা, সংকটকাল। তবে ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ শব্দজোড়ায় ‘প্রদোষ’ শব্দের অর্থ বিপর্যস্ত, বিপর্যস্ত অবস্থা, সংকটকাল, বিপদ, সংকট, বিপর্যয়, অসহনীয় অবস্থা, অসহনীয় অবস্থা হতে উত্তরণের প্রয়াস প্রভৃতি। এই শব্দগুচ্ছের ‘প্রাকৃতজন’ শব্দের অর্থ সাধারণ জনগণ, ক্ষমতাহীন জনসাধারণ, অবহেলার শিকার জনগোষ্ঠী, নীরিহ লোকজন প্রভৃতি। সুতরাং প্রদোষে প্রাকৃতজন শব্দগুচ্ছের অর্থ হলো : সংকটে সাধারণ জনগণ, বিপর্যস্ত জনগণ, বিপর্যস্ত দেশ প্রভৃতি। রাষ্ট্রপতির সচিব ভূইয়া সফিকুল ইসলাম ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ নামের একটি উপন্যাস (২০১৭) লিখেছেন।১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে আর এক সচিব প্রদোষে প্রাকৃতজন নামের একটি উপন্যাস লিখেছিলেন।কাহিনি ও উপস্থাপনা ভিন্ন হলেও দুটো উপন্যাসের অন্তর্নিহিত ভাব প্রায় অভিন্ন। গুরুত্বপূর্ণ লিংক শুবাচ লিংক শুবাচ লিংক /২ শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১ শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২ বাংলা বানান জঞ্জাল দিবস   যবন শব্দের ব্যুৎপত্তি   ধারণ কিন্তু ধরন কেন গল্পে গল্পে বাংলা বানান   রাজা বাদশাহ সম্রাট শাহেনশাহ   সস্তার তিন অবস্থা প্রেসক্রিপশনে RX  লেখার কা

বড়ো-ছোটো এবং ছোটো-বড়ো / ড. মোহাম্মদ আমীন

বড়ো-ছোটো এবং ছোটো-বড়ো দেখুন বাংলা ভাষার শব্দের বাহাদুরি। কীভাবে অনায়াসে বৃহৎ-বাচক শব্দকে ক্ষুদ্র-বাচক শব্দে পরিণত করা যায়।  নিচে প্রথম শব্দটি বৃহৎ অর্থে এবং দ্বিতীয় শব্দটি ক্ষুদ্র অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ১ কলস : কলসী কোশা (পূজার বড়ো তাম্রপাত্র) : কুশি (পূজার ছোট তাম্রপাত্র) কোঠা (বড়ো বাড়ি) : কুঠি (ছোটো বাড়ি) খাট : খাটুলি গাঁটরা : গাঁটরি ঘট : ঘটি চয়ন : চয়নিকা চিমঠা : চিমঠি চুরুট : চুরুটিকা ছাঁকনা : ছাঁকিনি জাল (বড়ো জাল) : জালতি (ছোটো জাল) ঝোলা : ঝুলি ২ টোলা (বড় পাড়া) : টুলি (ছোট পাড়া) ডালা : ডালি ডিঙ্গা : ডিঙ্গি ডেক (বড়ো হাঁড়ি) : ডেকচি (ছোটো হাঁড়ি) ডাবর (বৃহৎ জলপাত্র) : ডাবরি (ক্ষুদ্র জলপাত্র) ঢোলক : ঢোলকি, ঢুল্কি ঢাকনা : ঢাকনি ঢেলা : ঢিল তক্তা : তক্তি তল্পা : তল্পি থালা : থালি দড়া : দড়ি ধাড়ী : বাচ্চা ধামা: ধামী নোড়া : নুড়ি পোটলা : পুটলি পুতুল : পুতলি ৩ এরূপ আরও অনেক শব্দ আছে। যেমন : নাটক : নাটিকা পত্র : পত্রিকা পুস্তক : পুস্তিকা দড়া : দড়ি মালা : মালিকা/ মালবিকা

কুল রাখা কি শ্যাম রাখা / ড. মোহাম্মদ আমীন

কুল রাখা কি শ্যাম রাখা : অর্থ উভয় সংকট, মানসিক দ্বন্দ্ব।  একদিকে শ্যাম বা কৃষ্ণের সঙ্গে অবৈধ প্রণয় অন্যদিকে সতীর্থধর্ম ও বংশের সম্মান।  শ্রীরাধা এই উভয় সংকটে পড়েছিলেন। পৌরাণিক এই ঘটনা হতে প্রবাদটির উদ্ভব।

এক পালি ধানে মহাভারত / ড. মোহাম্মদ আমীন

আপনার নাম? এক পালি ধানে মহভারত। এর অর্থ? লেখক।  কী বলেন? বড়ো কাজে সামান্য পরিশ্রম যারা পায় তারাই এক পালি ধানে মহভারত।  আমি লেখালেখি করি। তাই জন্মনাম পরিবর্তন করে যথার্থ নাম গ্রহণ করেছি।

ব্যাকরণ / লিয়াকত চৌধুরী, শুদ্ধ বানান চর্চা

"১৪৯২ সাল।" পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্য" প্রজেক্টটা জমা দিলেন কলম্বাস রানি ইসাবেলার কাছে। ঠিক ওই সময়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলেন এক বৈয়াকরণ : এলিয়ো আন্তোনিয়োদি নেব্রিহা। রানির ভাষাকে তিনি ভেঙেচুরে আকারতন্ত্রের আঁটোসাঁটো খাপে পুরে দিয়েছেন।তৈরি করেছেন ব্যাকরণ।-- নেব্রিহা রানির কাছে দরবার করলেন,এই বইটার প্রচার আর প্রসারের জন্য। কারণ হিসেবে দর্শালেন যে, এই ব্যাকরণ বইটা নাকি রানির সাম্রাজ্য আর ভাষার মধ্যে বিয়ে ঘটিয়ে দেবে।--শুধু নিজের দেশেই এই সুবিধে ঘটবে তা নয়,"অসভ্য বর্বর শিক্ষকহীন " গোষ্ঠীগুলোকেও রানির ভাষায় শিক্ষা দেবে--"  ফলে যা হবে তা হল : অন্যের ভাষাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে।  দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।

কানাশুক্কুর / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘কানাশুক্কুর’ শব্দের অর্থ পক্ষপাতদুষ্ট লোক। শুক্কুর বা শুক্র ছিলেন দৈত্যগুরু।  বলিরাজের দানে বিঘ্ন সৃষ্টি করায় দৈত্যগুরু শুক্কুরের এক চোখ নষ্ট হয়ে যায়।  পৌরাণিক এই কাহিনি থেকে শব্দটির উদ্ভব।

কদম গাছে কানাই / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘কদম গাছে কানাই’ একটি প্রবচন। এই প্রবচনের অর্থ লম্পট, দুশ্চরিত্র। শ্রীকৃষ্ণ কদম গাছের তলায় বাঁশী বাজাইয়া গোপীদের মন হরণ করিতেন। সূত্র : শ্রীসুধীরচন্দ্র সরকার, বিবিধার্থ অভিধান, প্রথম প্রকাশ বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ, পৃষ্ঠা ১৬৩।  ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কো. প্রাইভেট লি., ৯৩ মহাত্মা গান্ধী রোড, কলকাতা -৭।   পুরাণের শ্রীকৃষ্ণ বংশীবাদক, কিন্তু তিনি কদমগাছের তলায় বাঁশি বজাতেন এটা নিতান্তই বাংলা রূপকল্প। বাংলার কবি চণ্ডীদাস লিখেছেন হাথে ভাণ্ড মাথে করী চান্দ চন্দন চর্চ্চিত গাএ। যমুনার তীরে কদমের তলে কে না বাঁশী বোলাএ ॥ একবার বিবেচনা করুন, ভারতের উত্তরপ্রদেশে স্থিত বৃন্দাবনে কি বাংলাদেশের মত কদমগাছ ছিল? চণ্ডীদাসের পুরো কাব্যই অশ্লীল ও অশালীন ভঙ্গিতে ভরপুর, যা আদিরসাত্মক সাহিত্যরূপে শিল্পগুণের দাবিদার কিন্তু কৃষ্ণের চরিত্রবিচারের উপযুক্ত গ্রন্থ নয়। রাধা ও কৃষ্ণের পরকীয়া প্রেম নিয়ে সমাজে যা প্রচলিত, তা সম্পূর্ণই সাহিত্যনির্ভর, এর পৌরাণিক ভিত্তি নেই। একমাত্র ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ছাড়া আর কোন পুরাণে রাধার নামই পাওয়া যায় না। পুরাণবিশেষজ্ঞগণ বলেন আদি ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ হারিয়ে গেছে, বর্তমানে প্রাপ্

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম শব্দ চেনার কৌশল ১। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মানুযায়ী ‘ঈ ঊ ঋ এবং এ তিনটি বর্ণের কারচিহ্ন ‘ী, ‍ূ, ‍ৃ’- যুক্ত সব শব্দই তৎসম শব্দ। ২। মূর্ধন্য-ণ যুক্ত সব শব্দ তৎসম। ৩। যেসব শব্দের পূর্বে প্র, পরা, অপ, সম, অব, অনু, নির(নিঃ), দুর(দুঃ), উৎ, অধি, পরি, প্রতি, উপ, অভি, অতি প্রভৃতি উপসর্গ যুক্ত থাকে সেগুলো তৎসম শব্দ হবে। ৪। ক্ত্র, ক্ম, ক্ষ, ক্ষ্ণ, ক্ষ্য, ক্ষ্ম, ক্ষ্ম্য, গ্ধ, গ্ন্য, গ্ম, ঘ্ন, ঙ্ক্ষ, ঙ্ম, চ্ছ্ব, চ্ছ্র, জ্ঝ, জ্ঞ, ঞ্ছ, ঢ্র, ত্ত্ব, ত্ম্য, ত্র্য, দ্ব্য, দ্ম, ধ্ন, ধ্ম, ন্ত্য, ন্ত্ব, ন্ত্র, ন্ত্র্য, ন্দ্ব, ন্ধ্য, ন্ধ্র, ন্ন্য, ল্ম, শ্ছ, শ্ম, ষ্ক্র, ষ্ট্য, ষ্ট্র, ষ্ব, ষ্ম, স্ত্য, স্থ্য, হ্ন্য, হ্ম, হ্ল ইত্যাদি যুক্তবর্ণ কেবল তৎসম শব্দে দেখা যায়। অতএব এমন যুক্তবর্ণ-যুক্ত শব্দ তৎসম। ৫। বিসর্গযুক্ত শব্দগুলো এবং বিসর্গসন্ধিসাধিত শব্দগুলো তৎসম শব্দ। ৬। বহুবচনবাচক গণ, বৃন্দ, মণ্ডলী, বর্গ, আবলি, গুচ্ছ, দাম, নিকর, পুঞ্জ, মালা, রাজি, রাশি প্রভৃতি থাকলে শব্দ তৎসম হয়। ৭। সমাসবদ্ধ পদের একটি অংশ তৎসম জানা থাকলে অপর অংশটি এবং সমস্তপদটিও তৎসম হয়। যেমন চন্দ্রমুখ শব্দে চন্দ্র অংশটি তৎসম

শেষ ও সমাপ্তি / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘শেষ’ শব্দের অর্থ finish কিন্তু ‘সমাপ্তি’ শব্দের অর্থ end. দুটি শব্দের পার্থক্য নিচে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হলো ১. শেষ : জাফর সাত বছর প্রেম করার পর বিয়ে করলেন। তাদের দাম্পত্য জীবন নরকময়। এক্ষেত্রে বলা যায়- জাফরের সাত বছরের প্রেম বিয়ের পর শেষ হয়ে গেল। অর্থাৎ জাফর শেষ। ২. সমাপ্তি : জাফর সাত বছর প্রেম করার পর বিয়ে করলেন। তাদের দাম্পত্য জীবন স্বর্গময়। এক্ষেত্রে বলা যায়- বিয়ের মাধ্যমে জাফর সাত বছরের প্রেমের সমাপ্তি ঘটালেন। অর্থাৎ জাফর সফল। ৩. পরিসমাপ্তি. সমাপ্তিকে আরও অর্থবহ ও সার্থকভাবে প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক জাফর সাহেব গত কাল মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার জেষ্ঠ্য ছেলে ডাক্তার, মেজো ছেলে প্রশাসক। একমাত্র মেয়ে শল্য চিকিৎসক। ৮৯ বছর সুখে জীবন যাপন করে গত কাল তার বর্ণাঢ্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটল।