Posts

Showing posts from February, 2015

জন্য নাকি জন্যে/ ড. মোহাম্মদ আমীন

জন্য/জন্যে, দেওয়া/দেয়া; নিকাশ/নিকেশ, নেওয়া/ নেয়া; মধ্য দিয়ে/মধ্যে দিয়ে, সন্ধ্যা/সন্ধে, হিসাব/হিসেব উপরে বর্ণিত শব্দ-জোড়াসমূহে অবস্থিত উভয় শব্দ-রূপের সঙ্গে সবাই কম-বেশি পরিচিত। প্রচলিত বিভিন্ন বানান-বিধি অনুসারে উভয়রূপ শুদ্ধ, তবে কোনটি কোথায় কখন কীভাবে এবং কেন ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে অনেকে  সম্যকভাবে অবগত নন।  তাই বাক্যে রূপ-দুটোর ব্যবহারে প্রায়শ ভুল লক্ষ করা যায়। প্রচলিত বানান বিধি অনুসারে প্রামাণ্য লেখ্য ভাষায় ‘জন্য, দেওয়া, নিকাশ, নেওয়া, মধ্য দিয়ে, সন্ধ্যা ও হিসাব’ রূপটি ব্যবহার করা সমীচীন। এগুলোর কথ্যরূপ হচ্ছে যথাক্রমে ‘জন্যে, দেয়া, নিকেশ, নেয়া, মধ্যে দিয়ে, সন্ধে, হিসেব প্রভৃতি। শব্দ-জোড়ার দ্বিতীয় অর্থাৎ কথ্য-রূপটি প্রবাদ-প্রবচন বা সংলাপ ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহার করা বিধেয় নয়। কারও মন্তব্য সম্পূর্ণভাবে কিংবা আংশিকরূপে উদ্ধৃত করা প্রয়োজন হলে বর্ণিত শব্দ-জোড়ার কথ্যরূপ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে উদ্ধৃতচিহ্ন ব্যবহার করতে হবে। সূত্র : বাংলা শব্দের প্রমিত-প্রয়োগ।

রাগ / ড. মোহাম্মদ আমীন

রাগ রাগ শব্দের বর্তমান আভিধানিক অর্থ ক্রোধ, রোষ, গোস্সা রঞ্জক-দ্রব্য প্রভৃতি। তবে ’রাগ’ বলতে আমরা সাধারণত ক্রোধ, রোষ, গোস্‌সা, ক্ষুব্ধ ইত্যাদি বুঝে থাকি। প্রকৃতপক্ষে সংস্কৃত হতে বাংলা ভাষায় আগত ‘রাগ’ শব্দের আদি ও মূল অর্থ ছিল : স্নেহ, প্রীতি, ভালবাসা (ভালোবাসা!), প্রেম, আদর প্রভৃতি। অনেকে এমন তথ্য নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু অনুরাগ, সংরাগ, পূর্বরাগ প্রভৃতি শব্দের অর্থের দিকে তাকালে তাদের বিস্ময় আর থাকবে না। ‘অনুরাগ’ শব্দের অর্থ ভালবাসা কিংবা প্রেম-প্রীতির চেয়েও গভীর। নানা কারণে ‘রাগ’ শব্দের মূল অর্থ উল্টে গেলেও ‘রাগ’ শব্দের সঙ্গে নানা শব্দগুচ্ছ (উপসর্গ) যুক্ত হয়ে যে সকল শব্দ গঠিত হয়েছে সেগুলোর অর্থ এখনও মূল অর্থের মতো অবিকল রয়ে গিয়েছে। এ জন্য ‘রাগ’ যতই অনাকাঙ্ক্ষিত হোক না কেন, অনুরাগ বড়ই মধুর, নিঃসন্দেহে পরমভাবে কাঙ্ক্ষিত। কীভাবে ‘রাগ’ শব্দটির অর্থের এমন পরিবর্তন হলো? সংস্কৃত হতে বাংলায় আসার প্রাক্কালে ‘রাগ’ শব্দটি তার মূল অর্থ ‘ভালোবাসা ও প্রেম-প্রীতি’ নিয়েই এসেছিল। কিন্তু বাঙালিরা সংস্কৃত ‘রাগ’ অর্থাৎ ভালবাসাকে তার মূল অর্থে ধরে রাখতে পারেনি। বাঙালিরা যেমন চঞ্চল তেমনি

বক ধার্মিক / ড. মোহাম্মদ আমীন

বক ধার্মিক ভারতীয় পুরাণের একটি কথোপকথন থেকে ‘বক ধার্মিক’ বাগ্‌ভঙ্গিটির উৎপত্তি। এর আভিধানিক অর্থ কপট- সাধু, ভদ্রবেশী অভদ্র, বগলে ইট মুখে শেখ ফরিদ, বর্ণচোরা প্রভৃতি। এবার বাগ্‌ভঙ্গিটির উৎস নিয়ে আলোচনা করা যাক। শ্রী রামচন্দ্র ও লক্ষণ বনবাসকালে একদিন পম্পা সরোবরের তীরে ভ্রমণ করছিলেন। তখন ওই পম্পা সরোবরের তীর-নিকটবর্তী অগভীর জলে এক শুভ্রকান্তি বককে খুব সন্তর্পণে ধীর পায়ে হাঁটতে দেখে রামচন্দ্র লক্ষ্মণকে বললেন : শনৈঃ শনৈঃ ক্ষিপেৎ পাদৌ প্রাণীনাং বধ শঙ্কয়া। পশ্য লক্ষ্মণ পম্পায়াং বকঃ পরমধার্মিকঃ।। অর্থাৎ “হে লক্ষ্মণ, দেখ, এই পম্পা সরোবরের জলে বসবাসরত কোনও জীব মরে যেতে পারে শঙ্কায় বক কেমন অতি সন্তর্পণে ধীরে ধীরে পদক্ষেপ করছে, অতএব বোধ হচ্ছে বক পরম ধার্মিক।” রামচন্দ্রের সমস্ত দায়ভার ছিল লক্ষণের হাতে। অগ্রজ রামচন্দ্রের আজ্ঞায় তার জীবন-ধারণের উপযোগী সকল কাজ লক্ষ্মণই সম্পন্ন করেন, তাই তার বাস্তবিক ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা ছিল অধিক। তিনি রামচন্দ্রকে বললেন : ন জানাসি রাঘব ত্বং বকঃ পরম দারুণঃ। নির্জীব ভক্ষকো গৃধ্রঃ সজীব ভক্ষকো বকঃ ।। অর্থাৎ, ”হে রাঘব,আপনি জানেন না যে এই শুভ্রকান্তি বক ধার্মিক ত

ফাতরা / ড. মোহাম্মদ আমীন

ফাতরা ‘ফাতরা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অপ্রয়োজনীয়, নিষ্প্রয়োজন, মূল্যহীন, ধাপ্পাবাজ, বাজে, হালকা, খেলো, বাচাল, বিরক্তিকর প্রভৃতি। ‘ফাতরা’ কোনো বিদেশি ভাষা থেকে আসা শব্দ নয়। আমাদের বহুল পরিচিত কলাগাছ থেকে ‘ফাতরা’ শব্দের উৎপত্তি। কলাগাছের পাতা ধরে টান দিলে পাতার সঙ্গে ফড় ফড় শব্দে যে শুকনো বাকল উঠে আসে তাকে ‘ফাতরা’ বলা হয়। কলাপাতা সংগ্রহের জন্য কলাগাছের পাতা ধরে টান দেওয়া হয় কিন্তু তৎসঙ্গে উঠে আসে অপ্রয়োজনীয় বস্তু ফাতরা। শুধু তাই নয় বাচালের মতো অর্থহীন ও ফড় ফড় বিশ্রী শব্দে সৃষ ্টি করে বিরক্তি। কলাপাতা একটি প্রয়োজনীয় বস্তু, তবে তার সঙ্গে লেখে থাকা ফাতরা মূল্যহীন। কলাপাতাকে কাজে লাগাতে হলে ‘ফাতরা’ কেটে ফেলতে হয়। ফাতরা পরিষ্কার করা যেমন সময়ক্ষেপক তেমন বিরক্তিকর। ফাতরার এ অপ্রয়োজনীয় অবস্থান ও অবাঞ্ছিত বৈশিষ্ট্যকেই বাংলায় ‘ফাতরা’ শব্দে তুলে ধরা হয়েছে। এ শব্দের মাধ্যমে কলাগাছের ‘ফাতরা’ বড় ভীষণ যত্নে কলাগাছ থেকে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নেমে এসেছে।

ঊর্ধ্ব ঊরু দীর্ঘ ঊ-কার / শাহিদুল হক-শুবাচ

ঊর্ধ্ব ঊরু দীর্ঘ ঊ - কার ঊর্ধ্ব ঊরু ঊর্মি ঊষর ঊহ্য যদি লেখি তাদের আগে দীর্ঘ ঊ - কার লক্ষ্য করে দেখি । লিখতে উনিশ হ্রস্ব উ - কার মাথায় যেন থাকে ঊনবিংশে দীর্ঘ ঊ - কার তৎসমতে রাখে । ধূলি কূলি পূর্ণ প্রসূন শূন্য এবং রূপে স্বয়ম্ভূ আর দূরত্বতে দীর্ঘ ঊ - কার চুপে । আয়ত্ত হয় ধীরে ধীরে রূঢ় হলেও সত্য বানান শেখা অনেক মজার চর্চা করা শর্ত । মন্তব্য : তৎসম শব্দে দীর্ঘ ঊ বা দীর্ঘ ঊ - কার থাকলে কখনোই তা পাল্টাবে না। এ জাতীয় শব্দগুলো পড়তে - পড়তে লিখতে - লিখতে আয়ত্ত হবে। যেমন - ঊর্ধ্ব , ঊরু , ঊর্মি , ঊষর , ঊহ্য , ধূলি , কূলি , পূর্ণ , প্রসূন , শূন্য , রূপ , রূঢ় ইত্যাদি ।

সবুরে মেওয়া ফলে / ড. মোহাম্মদ আমীন

সবুরে মেওয়া ফলে এটি একটি বাগধারা। এর অর্থে কমবেশি সবার জানা। আসলেই ‘সবুরে মেওয়া ফলে ’| তো এই মেওয়াটা কী ? সবুরে মেওয়া ফলে - এখানে " মেওয়া " মূলত প্রত্যাশিত বা কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যা বস্তুগত ও মননে দুভাবে হতে পারে । আরবি ' সবর ' থেকে সবুর ও ফারসি ' মিওয়াহ '  শব্দ-দুটো মিলে মেওয়া শব্দের উৎপত্তি। সবর শব্দের অর্থ ধৈর্য। সুতরাং সবুর ও মেওয়া মিলে এ ' বিশিষ্টার্থক বাগ্ ‌ গুচ্ছটি তৈরি হয়েছে । বকি অংশ গবেষণা, প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন, মাতৃভাষা জ্ঞান, প্রাত্যহিক প্রয়োজন, শুদ্ধ বানান চর্চা এবং বিসিএস-সহ যে-কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অতি প্রয়োজনীয় কয়েকটি লিংক : শুবাচ লিংক শুবাচ লিংক /২ শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১ শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২ শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৩ নাটোর জেলার নামকরণ চকরিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ ও ঐতিহ্য হাতিয়া উপজেলার নামকরণ ইতিহাস ও ঐতিহ্য পটুয়াখালী আগুনমুখা নদীর নামকরণ ভেদরগঞ্জ উপজেলা ও ইউনিয়নসমূহের নামকরণ আমিও পুলিশ ছিলাম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ভুল আর ভুল চটি পড়

করিনি না কি করি নি / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘করিনি’ নাকি ‘করি নি’ বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১২ নিশ্চিত করেছে না - বাচক নি সমাসবদ্ধ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ করিনি যুক্তভাবেই লিখতে হবে। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম ৩ . ৩ - সহ সংযুক্ত ছবিটি Promito Bangla Bananer Niom_2012.pdf নামের পুরনো একটি ফাইল থেকে নেওয়া দুটি অংশ জুড়ে তৈরি করেছি , যে কারণে বাংলা একাডেমি ওতে ' একাডেমী ' বানানে লেখা হয়েছে দেখতে পাচ্ছেন। আমি আজ বাংলা একাডেমি বইমেলা থেকে পুস্তিকাটির পরিমার্জিত সংস্করণ ( ২০১২ )- এর প্রথম পুনর্মুদ্রণ মাঘ ১৪২১ / জানুয়ারি ২০১৫ - এর একটি কপি কিনেছি , যাতে বাংলা একাডেমি লিখতে হ্রস্ব - ইকার দিয়ে একাডেমি বানানই লেখা হয়েছে , এবং যার প্রচ্ছদ অন্য ছবিতে দেখছেন। শুবাচের সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা !

মহৎ যোগে ত্ব হলে যে / শাহিদুল হক

মহৎ যোগে ত্ব হলে যে ‘ মহৎ ’ যোগে ‘ ত্ব ’ হলে যে ‘ মহত্ত্ব ’ যায় বেড়ে ‘ মনঃকষ্ট ’ ঢের বেড়েছে ‘ মন্ত্রিসভা ’ ছেড়ে। ‘ মানসিকে ’ ‘ দন্ত্য স ’ টা কেন থাকে জানব ‘ মীমাংসা ’ তে দীর্ঘ ঈ - কার এটা সবাই মানব। ‘ মেধাবী ’ আর ‘ মরীচিকা ’ ভুল হয়ে যায় লিখতে ‘ মুষলধারে ’ বৃষ্টি হলে সহজ হবে শিখতে। ‘ মুখস্থ ’ আর ‘ মুখচ্ছবি ’ র বানান সবাই জানে ‘ মূর্খ ’ তেমন বেশ ‘ মামলি ’ বলছি কানে কানে । মন্তব্য : ম - সংশ্লিষ্ট কিছু বানানের শুদ্ধ শব্দ দেওয়া হল। চর্চার মাধ্যমে মনে রাখা সহজ হবে । যেমন মহত্ব > মহত্ত্ব , মনোকষ্ট > মনঃকষ্ট , মন্ত্রীসভা > মন্ত্রিসভা , মানষিক > মানসিক , মেধাবি > মেধাবী , মিমাংসা > মীমাংসা , মুশলধারে > মুষলধারে , মুখস্ত > মুখস্থ , মুখছবি > মুখচ্ছবি , মুর্খ > মূর্খ , মামলী > মামলি ইত্যাদি ।