Posts

Showing posts from May, 2014

আহমদ ছফার প্রবন্ধ : ত্রিকালদর্শীর বিমূর্ততা/ ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

Image
আহমদ ছফার প্রবন্ধ আহমদ ছফা নামটির মধ্যেই প্রাবন্ধিক অনুভূতির শৈল্পিক-কাকলী, যুক্তির উৎকর্ষ, পরিশীলিত চেতনা বিহ্বল আহ্বান, ঋদ্ধিক মননশীলতার চিরন্তন অনুভূতি, আত্মোপলব্ধিমুগ্ধ সার্বজনীনতা, পরিব্যাপ্তিময় সৌন্দর্য্যরে নিবিড় চেতনা এবং মুক্তবুদ্ধি-উজ্জীবিত সাহসী অনুরণন লালিত্য আগ্রহে ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে। তাঁর প্রবন্ধ সাহসিকতার অনল, তত্ত্ব-তথ্যের নিপূণ সমন্বয় এবং সতত প্রতীতির তৃপ্তিকর পুষ্টি। প্রতিটি কথা বাস্তবতার প্রমুগ্ধ গাঁথুনিতে প্রকৃতির মত নিপাট, ইতিহাসের মত নিখাদ। আহমদ ছফার প্রবন্ধ পাঠকমহলে আলাদা মর্যাদায় গৃহিত, বিশ্লেষক মহলে ভিন্নমাত্রায় স্বীকৃত। গবেষকদের কাছে তার প্রবন্ধ তুলনাহীন গ্রহণযোগ্যতার নন্দিত মোহনা। সাহসিকতা, স্পষ্টবাদিতা এবং লুকোচুরিহীনতার জন্য তাঁর প্রবন্ধ যেমন আলোচিত তেমনি সমালোচিত। বস্তুত এটাই প্রবন্ধের সার্থকতা। এখানে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্রাচার, সমালোচনা, জীবন, মুল্যবোধ, ধর্ম, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা-আন্দোলন, দর্শন, নান্দনিকতা, শিক্ষা ব্যবস্থা, গ্রাম, নগর, বুদ্ধিজীবী, সাধারণ মানুষ, চোরাচালান, সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং পররাষ্ট্র ব্যবস্থাপনাসহ প্রাত্যাহিক জী

আহমদ ছফা ও মোহাম্মদ আমীন / ড. মোহাম্মদ আমীন- শুবাচ

Image
বিয়ে করবেন না? ওহ্‌, আল্লাহ্‌, আমার বিয়ের জন্য তোমার এত মাথা ব্যাথা কেন? যাও, এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে এস। এত সিগারেট টানেন কেন? এটাই একমাত্র বস্তু যে, জ্বালিয়ে দিলেও কোন প্রতিবাদ করে না। I can ask for cigarettes in every language. আপনি চন্দনাইশ খুব কম যান। মাঝে মাঝে যাই এটও তোমাদের ভাগ্য। তুমি জান না আমার ভাতিজা সিরাজ, আনোয়ার এরা কীভাবে আমাকে প্রতিনিয়ত শোষণ করছে? কীভাবে কষ্ট দিচ্ছে প্রতিবেশিরা? সম্পত্তি নিয়ে কীভাবে হয়রানি করছে? আমি সম্পত্তিগুলো তাদের দিয়ে দেব। আত্মীয়দের জন্য ঢাকা পর্যন্ত থাকতে পারছি না, আবার গ্রাম! যেখানে আমার নিজের চলতে কষ্ট হচ্ছে সেখানে সিরাজ- আনোয়ারের মতো অথর্ব আত্মীয়দের ব্যয়ভারও আমাকে বহন করতে হচ্ছে। সিরাজকে তো আপনি ভালোবাসেন? তোমার ফুপাতো বোন বিয়ে করেছে। সে মেয়েটির জন্যই আমার কষ্ট। আনোয়ার তো শুধু পাওয়ার জন্য আসে।   সিগারেট কই? বাংলামটরের বাসা থেকে একটু দূরেই যেতে হয় সিগারেট আনতে। গিয়ে দেখি আহমদ ছফা গোসল করার জন্য বাথরুমে ঢুকে গেছেন। আমার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে আসেন গোসল না-করে। বললেন, আগে আর একটা সিগারেট টেনে নিই, নইলে গোসল জমবে না।

ভাত এল কোত্থেকে / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

ভাত কারও কারও মতে সংস্কৃত ‘ভক্ত’ থেকে প্রাকৃত ‘ভত্ত’ এবং সেখান থেকে ‘ভাত’ শব্দের জন্ম। আবার অনেকে মনে করেন ‘ভাতার’ শব্দ থেকে ‘ভাত’। বিষয়টা পর্যালোচনা করা যাক। ‘ভাত’ বলতে সে সব বিষয় বা বস্তু বুঝায় যা অন্নরূপে শোভা পায়। সিদ্ধ তণ্ডুল, অন্ন, অন্নপ্রাশন, জীবিকা, দীপ্তি পাওয়া, প্রকাশ পাওয়া, শোভা পাওয়া প্রভৃতি অর্থও শব্দটি প্রকাশ করে। ‘ভাত’ এর সঙ্গে ‘ভাতা, ভাতার, ভাতারকামড়া, ভাতার খোর, ভাতারখাগী, ভাতারনড়, ভাতারী’ প্রভৃতি শব্দের সম্পর্ক বেশ নিবিড়। ভাতা = ‘ভাত’-এর আধার যাতে; বেতন ব্যতিরেকে কর্মচারীদের অন্যত্র যাতায়াত ইত্যাদির জন্য প্রদেয় বৃত্তিকেও ‘ভাতা’ বলে; এর সঙ্গেও ভাতের সম্পর্ক রয়েছে। ভাতার = ভাতা রয় যাতে; পতি অর্থেও ভাতার (স্ত্রীভাষায়) প্রচলিত, কারণ পতি ‘ভাত’ দেয়।। ভাতারী = ভাতারকে সক্রিয়ভাবে ধারণ করে যে, ভাতারের স্বামী বা যে ‘ভাত’ দেয় তার আধার। ‘ভাতারকামড়া’ শব্দটি প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায়। এর অর্থ, যে স্ত্রী ভাতারকে কামড়িয়ে থাকে অর্থাৎ ছাড়তে চায় না। ‘ভাতারখোর’ বলতে বুঝায়, সে স্ত্রী, যে ভাতার (স্বামী) এর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল এবং ভাতার ভিন্ন আর কোন উপায় নেই; তাই ভাতারকে ছাড়তে চায় ন

গরু মেরে জুতো দান / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

গরু মেরে জুতো দান : ইংরেজিতে To rob peter to pay Paul বাগ্‌ভঙ্গির অর্থ একজনের কাছ থেকে নিয়ে অন্যজনকে দেওয়া। তবে বাংলায় এর অর্থ গরু মেরে জুতো দান। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডে ওয়েস্টমিনিস্টারের St. Peter Church-কে St. Peter’s Cathedral - এ পরিণত করা হয়। এ সময় St Paul’s Cathedral এর আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ ক্যাথিড্রালটি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড়। এ দুরবস্থা কাটিয়ে তোলার জন্য - St. Peter’s Cathedral এর ফান্ড থেকে অর্থ নিয়ে St Paul’s এর আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধন করা হয়। এর থেকে এ প্রবাদটির জন্ম। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশের প্রশাসনে এমন ব্যবস্থা দেখা যায়। দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করার জন্য সরকার অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের অর্থ প্রদান করে।

শব্দে পুরুষাধিপত্য / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

স্ত্রীবাচক শব্দে পুরুষাধিপত্য পুত্র শব্দের ব্যুৎপত্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘পুৎ’ নামক নরক থেকে উদ্ধার করে বলে ছেলে সন্তানের নাম পুত্র। তা হলে কন্যার ব্যুৎপত্তি কী? সে কাউকেই ত্রাণ বা উদ্ধার করতে পারে না, বরং তার কাছ থেকে জন্মদাতা ত্রাণ চায়। কন্যার মতো শব্দটিকেও কামনার রেশ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মহাভারতে ব্যাসদেবের ব্যাখ্যা দেখুন : সর্বান্ কাময়তে যস্মাৎ (৩.৩০৬.১৩)। এর অর্থ ‘কন্যা মানে ‘কাম্যা’। কন্ আর কম্ কুটুম্ব ধাতু। ‘ভগিনী’ শব্দটির অর্থ ভগাযুক্ত, অনেকে সরাসরি স্ত্রীচিহ্ন-ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করেন। আলংকারিক কবি দণ্ডী ভগিনী শব্দকে জুগুপ্সাব্যাঞ্জক বলেছেন, সাহিত্যে শব্দটির ব্যবহার থেকে বিরত থাকতেও বলেছেন - ভগিনী-ভগবত্যাদি গ্রাম্যকক্ষাং বিগাহতে। পুরুষের সমকক্ষ হয়েও কন্যা কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদের দাবিদার হবে তা ছিল কল্পনারও বাইরে। এ জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ, প্রেসিডেন্ট, চেয়ারম্যান, মন্ত্রী ইত্যাদির স্ত্রীলিঙ্গের কথা ভাবাই হয় নি। ভার্যা নামটাই অবমাননাকর। তার উপর যৌনতা আরোপিত হওয়ায় ‘ভার্যা’ যখন পুত্র উৎপাদনের যন্ত্র ( পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা) হয়ে দাঁড়ায় তখন সত্যি কষ্ট

রবীন্দ্র- প্যরোডি- মং হ্লা প্রু পিন্টু - শুবাচ

'বাংলা উচ্চারণ' প্রবন্ধে তিনি নিচের প্যারোডি ব্যবহার করেছেন। 'ছেলে ঘুমোল পাড়া জুড়োল ফাস্টবুক এল দেশে— বানান ভুলে মাথা খেয়েছে এগজামিন দেবো কিসে।' কার লেখা প্যারোডি এটা?

সাথে ও সঙ্গে / মোরশেদ হাসান - শুবাচ

সাথে ও সঙ্গে ‘সাথে’ ও ‘সঙ্গে’ মূলত একই অর্থ বহন করে । কথ্যভাষায় আমরা বিশেষ করে এ বাংলার মানুষেরা 'সাথে' খুব বেশি ব্যবহার করি এবং লিখতে গেলেও অনায়াসে 'সাথে' লিখি । আবার এটাও বলতে হয় আমরা ব্যাকরণের নিগড়ে আবদ্ধ । সেখানে ব্যাকরণবিদরা নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন লেখ্যরূপে কবিতায় ব্যবহৃত হবে 'সাথে' কিন্তু গদ্যে ব্যবহৃত হবে শুধু 'সঙ্গে'। তাঁরা গদ্য ও পদ্যের মধ্যে একটি পার্থক্যের আবহ তৈরি করার জন্য এটি করেছেন । আরও কিছু কথা বলা যায়, কিছু শব্দ আছে যা শুধু কবিতার জন্যই বরা দ্দ । যেমন : তব, সম, তরে, দানিবে, নারিবে ( না-পারিবে ) । 'সাথে' শব্দটিও কবিতার জন্য বরাদ্দ। আমরা এ বাংলার মানুষ ‘সাথে’ শব্দটি এত বেশি ব্যবহার করি ব্যাকরণবিদরা যে পূর্বেই একটি নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন তা জানিই না । গদ্যে 'সাথে' ব্যবহার করা ব্যাকরণতভাবে অশুদ্ধ নয় তবে বলা যায় এটি শৈলীগত ত্রুটি।

রবীন্দ্র সঙ্গীত ও চিনি-কাহন / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

রবীন্দ্র সঙ্গীত ও চিনি-কাহন মরিস সাহেব ছিলেন শান্তিনিকেতনে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। একা থাকলে তিনি প্রায়স গুনগুন করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন। একদিন ছাত্র প্রমথনাথ বিশীকে বললেন : জান, বিশী, ‘গুরুদেব চিনির ওপর একটি গান লিখেছেন? প্রমথনাথ বিশী : জানি না তো স্যার। মরিস : গানটি বড় মিষ্টি। চিনি বিদেশ থেকে ভারতবর্ষে এসেছে গানে গুরুদেব তা-ও তুলে ধরেছেন। প্রমথনাথ : গানটা কী রকম স্যার? মরিস : ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধুপারে’। প্রমথনাথ : দারুণ তো! কিন্তু সিন্ধুপার? মরিস : সিন্ধুপার বোঝ? চিন থেকে চিনি, চিন তো সিন্ধুর ওপারে। গুরুদেবের বিচক্ষণতা দেখে হতবাক না হয়ে পারা যায়!

ছানাবড়া ও চক্ষু চড়ক গাছে - ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

ছানাবড়া ও চক্ষু চড়ক গাছের পার্থক্য প্রথম পণ্ডিত : ছানাবড়া মানে কী? দ্বিতীয় পণ্ডিত : ছানা আর বড়া মিশিয়ে প্রস্তুত একপ্রকার নাস্তা। বড় ভালো, বড় মিষ্টি। এটাতে যখন চিনি খুব বেশি হয় তখন খেতে বসলে আপনার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়। এখন বলুন তো, চক্ষু চড়ক গাছে অর্থ কী? প্রথম পণ্ডিত : আপানার ছানাবড়ায় যখন আপনার পত্মী চিনির পরিবর্তে খুব বেশি লবণ দিয়ে আপনাকে খেতে দেন তখন আপনার চক্ষু চড়ক গাছে উঠে যায়। [উৎস : শব্দচয়নকৌতুকী; অর্ধচন্দ্র, মোহাম্মদ আমীন।

তালপাতা থেতে পাততাড়ি / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

তালপাতার তাড়ি থেকে পাততাড়ি : পাততাড়ি শব্দের আধুনিক অর্থ : সমুদয় জিনিস, জিনিসপত্র । একসময় শব্দটির অর্থ ছিল পাতার তাড়ি বা গুচ্ছ। এ পাততাড়ি ছিল তালপাতার তাড়ি যা শিক্ষার্থীদের হাতে থাকত। এ দেশে যখন কাগজের প্রচলন ছিল না, তখন পাঠশালায় তালের পাতায় লেখালেখি করা হত। পাঠশালা বা গুরুগৃহে দিনের  লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তাদের তালপাতার তাড়ি ভালো করে গুছিয়ে  নিয়ে বাড়ি ফিরত। পাততাড়ি গুছিয়ে বাড়ি ফেরার এ প্রাচীন অনুষঙ্গ  থেকে ‘পাততাড়ি’ শব্দের উৎপত্তি। বর্তামানে এর অর্থ ভিন্ন  হয়ে গেলেও মূল অভিব্যক্তি আগের  মতো রয়ে গেছে।

হাত ও হাতি / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

হাত ও হাতি: সংস্কৃত শব্দ হস্ত থেকে বাংলা /হাত, হস্ত/ ও /হাতি. হস্তী/ শব্দের উৎপত্তি। হস্ত শব্দের বাংলা রূপান্তর হাত (hand)। এ হস্ত থেকে প্রত্যয়যোগে গঠিত হয়েছে হস্তী (elephant)। হস্তী শব্দের অর্থ হস্তযুক্ত বা যার হাত রয়েছে। ব্যাকরণের এ সূত্র মানতে গেলে মানুষেরই /হস্তী/ নাম হওয়া উচিত ছিল । কারণ মানুষই কেবল উত্তম হস্ত-সমৃদ্ধ প্রাণী। কিন্তু মানুষ সৃষ্টির সেরা প্রাণীর উপাধিটা আরও ভালোভাবে দেখানোর জন্য খুব ভেবেচিন্তে /হস্তী/ হয়নি। বিশাল পশু ঐরাবতকে /হস্তী/ বানিয়ে নিজে মানুষ থেকে গেছে। প্রাণিকুলে একমাত্র হস্তীরই দেহের সম্মুখাংশে শুঁড় নামের একটি সঞ্চরণশীল অঙ্গ রয়েছে। এটি অনেকটা মানুষের হাতের মত কাজ করে। এ সুযোগে মানুষ নিজে হস্তী না হয়ে ঐরাবতকে হস্তী বানিয়ে ছেড়ে দেয়। মানুষ সবসময় এমনই করে-একটা গুণ থাকলে গুণে একশটা আর এক হাজার দোষ থাকলে বলে তিন শূন্য।

উপর ও ওপর / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

‘উপর’ ও ‘ওপর’ উভয় শব্দের অর্থ অভিন্ন। এ দুটো শব্দের অর্থ নিয়ে কোনো ঝামেলা না থাকলেও প্রয়োগ নিয়ে ব্যবহারকারীগণ অনেক সময় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। কবি-সাহিত্যিক, পণ্ডিত ও বৈয়াকরণগণের অভিমত সাধু ভাষা কিংবা চিন্তামূলক প্রবন্ধে ‘উপর বা উপরে’ শব্দটি ব্যবহার করাই দীর্ঘ রীতি। ‘ওপর’ ও ‘ওপরে’ শব্দ দুটো যথাক্রমে ‘উপর’ ও ‘উপরে’ শব্দের কথ্যরূপ। ইদানীং অনেকে গল্প উপন্যাস এমনকি চিন্তামূলক প্রবন্ধেও ‘ওপর’ লিখছেন। অনেকে আবার চলিত গদ্যে ‘উপর বা উপরে’ লেখার পক্ষপাতি । আবার অনেকে যে গম্ভীর বা হালকা যে কোনো রচনায় ‘ওপর’ বা ‘ওপরে’ লেখার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অনেকে মনে করেন, ‘উপর’ শব্দটি অবিকল সংস্কৃত। তবে তা ঠিক নয়। বাংলা প্রয়োগ অভিধান গ্রন্থে সুভাষ ভট্টাচার্য বলেছেন, সংস্কৃত 'উপরি' শব্দ থেকে তদ্ভব 'উপর' শব্দের এবং এই 'উপর' শব্দ থেকে 'ওপর' শব্দ জন্মগ্রহণ করেছে। আসলে ‘ওপর’ হচ্ছে ‘উপর’ শব্দের কথ্যরূপ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬) অনুযায়ী ‘ওপর' কথ্য এবং 'উপর' সাধু শব্দ। সুতরাং ‘উপর’ এবং ‘ওপর’ দুটোই শুদ্ধ। তবে একই লেখায় উভয় শ

মঞ্জুভাষণ / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

মঞ্জুভাষণ কথার শক্তি তরবারির চেয়ে প্রবল। বলা হয়, কথার চেয়ে বেশি কষ্ট দিতে পারে এমন কোনও অস্ত্র নেই। আবার বলা হয়, কথার চেয়ে বেশি শান্তি দিতে পারে এমন পরম বিষয়ও পৃথিবীতে নেই। এ জন্য বলা হয়, শব্দব্রহ্ম। অর্থাৎ শব্দের শক্তি ব্রহ্মের মতোই অসীম। কোনও কিছু সোজাসুজি বোঝানোর জন্য যেমন শব্দ আছে তেমনি শব্দ আছে ঘুরিয়ে বলার। কোন ভদ্রলোক অপ্রিয় কথা সহজে সোজাসুজি বলতে চান না। অপ্রিয় কথাটি যখন না বললেই নয়, তখন মোলায়েম করে ঘুরিয়ে বলে। ইংরেজিতে শব্দ চয়নের এ কৌশলকে Euphemism বলা হয়। বাংলা য় এ কৌশলকে মঞ্জুভাষণ বলে। অধ্যাপক শ্যামাপ্রসাদ চক্রবর্তী তাঁর লেখা অলংকার চন্দ্রিকায় প্রথম মঞ্জুভাষণ শব্দটি ব্যবহার করেন। জামানের বন্ধু রবিন চুরি করে। বড় লজ্জা হয় জামানের কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না, রবিন চুরি করে। বলল : রবিনের হাতটানের অভ্যাস আছে। বাজারে যাবার সময় স্ত্রীর কণ্ঠ: চাল বাড়ন্ত, মানে বাড়িতে চাল নেই। চাল নেই বলা লজ্জা ও দারিদ্র্য প্রকাশক। তাই বাড়ন্ত। ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইল, না দিয়ে বলা হল : মাফ কর। অফিসে সাহেবকে ঘুষ দিয়ে বলল: কিছু মনে করবেন না স্যার, ভাবীর জন্য একটা শাড়ি আর বাচ্চাদের জন্য ক

শুদ্ধ বানান উচ্চারণ ও অর্থ / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

কয়েকটি শব্দের বানান, উচ্চারণ ও অর্থ ================== অকু (অকু) : ঘটনা, দুর্ঘটনা, [অকুস্থল : দুর্ঘটনাস্থল]। অক্‌তোদ্বাহ (অক্‌তোদ্‌বাহো) : অবিবাহিত। অঙ্গদ (অঙ্‌গদ্‌) : বাহুর অলঙ্কার, বাজুবন্দ। অজিফা (ওজিফা) : স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্বারা সাধ্য মন্ত্র। অটবি (অটোবি) : বন, অরণ্য। অহেতু (অহেতু) : অকারণ। অহৈতুক (অহোইতুক) : অকারণ। অভীপ্সা (ওভিপ্‌সা) : অভিলাষ, একান্ত বাসনা। অর্ধাশন (অরধাশোন্‌) : অশনের অর্ধভাগ, আধপেটা আহার অর্ধাসন (অরধাশোন্‌) : আসনের অর্ধভাগ অসূর্যম্পশ্য (অশুর্‌জম্‌পোশশো) : সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখে নি এমন। [স্ত্রী : অসূর্যম্পশ্যা] অসদ্‌গ্রাহী (অশদ্‌গ্রাহি) : অবৈধ দান গ্রহণকারী, ঘুষখোর। অস্মিতা (অস্‌মিতা) : আমিত্ব, অহঙ্কার, ব্যক্তিত্ব। অসদ্ব্যবহার (অশদ্‌ব্যাবোহার) : মন্দ আচরণ। অসবর্ণ (অশবর্‌নো) : ভিন্ন জাতীয়।   জগজ্জন (জগোজ্‌জন) : জগদ্বাসী, পৃথিবীর মানুষ। জগদ্বন্ধু (জগোদ্‌বোন্‌ধু) : জগতের কল্যাণকারী, সূর্য, ঈশ্বর। জঘন (জঘন্‌) : স্ত্রীলোকের নিতম্বের সম্মুখভাগ। জনয়িতা (জনোয়িতা) : উৎপাদক, পিতা, জন্মদাতা জনান্তিক (জনান্‌তিক) : লোকের নিকট, লোকের সম্মুখে

লেডিকোনি / ড. মোহাম্মদ আমীন -শুবাচ

লেডিকেনি: এটি এক প্রকার মিষ্টির নাম। ভারতের বড়লাট (Governor-General) লর্ড ক্যানিং (১৪ ডি. ১৮১২- ১৭ জুন, ১৮৬২) এর স্ত্রী লেডি ক্যানিং এর নামানুসারে পানতুয়ার আদলে তৈরি তাঁর প্রিয় বাঙালি মিঠাই। লেডি ক্যানিং এ মিষ্টিটি খুব পছন্দ করতেন। তাই এটির নাম হয়ে যায় লেডিকেনি। উল্লেখ্য লর্ড ক্যানিং ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ২১ মার্চ, ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের বড়লাট ছিলেন। বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে বলা হয়েছে ‘লেডিকেনি’ অর্থ : ছানা দ্বারা প্রস্তুত প্রসিদ্ধ রসালো মিঠাইবিশেষ।

শুদ্ধ বাানন / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

শুদ্ধ বানান ==== ১. ঊহ্য (উহ্য নয়)। ২. ঊরু (উরু নয়) ৩. ঊর্মি (অর্থ ঢেউ, তরঙ্গ, উর্মি নয়) ৪. ঊষর (অর্থ অনুর্বর, উষর নয়)

মনে মনে মনকলা খাও / বিধুভূষণ ভট্টাচার্য -শুবাচ

'মনে মনে মনকলা খাও!' মনে মনে মনকলা খাও, যতটা খেয়েছো আরো ততটা খাও, মোট যতটা খেয়েছো তার অর্ধেক খাও, এবার মোট কলার তিন ভাগের এক ভাগ তোমার কোন সহপাঠীকে দিয়ে দাও, একটা আমার জন্য রেখে দাও, এখন কয়টা অবশিষ্ট আছে? উত্তর: ৩টা। সিদ্ধান্ত: তাহলে তো দেখছি তুমি প্রথমে ২টা কলা খেয়েছিলে! (এভাবে বহু কলা খেয়েছি/খাইয়েছি ছেলেবেলায়।) বাংলাভাষায় ব্যবহৃত 'মনকলা খাওয়া' বাক্যভঙ্গিটির অর্থ হলো: কল্পনায় বাঞ্ছিত বস্তু উপভোগ করা। মনে মনে মনকলা খাওয়ার এই মানসাঙ্ক থেকেই কি 'মনকলা খাওয়া' বাক্যভঙ্গিটি এসেছে? (বি.দ্র. বেশিবেশি গাছপাকা মনকলা খান! শরীর ও ব্রেনের জন্য খুবই উপকারী!! একদম ফ্রি ও ফরমালিনমুক্ত!!!)

শব্দজ্ঞান / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

শব্দজ্ঞান: বাংলা ভাষায় এমন অনেক শব্দ বা শব্দ সমষ্টি আছে যেগুলোর উদ্ভবের পেছনে কোনো না কোনো ইতিাহাস, উপাখ্যান, ঘটনা, রটনা বা কোন কারণ থাকে। এ ইতিহাস, উপাখ্যান, ঘটনা, রটনা বা কারণ এক কথায় শব্দজ্ঞান বা শুব্দের বুৎপত্তি বা শব্দের উৎস নামে পরিচিত। উদাহরণ: ১. ইলশাগুড়ি (চলিত ইলশেগুড়ি) অর্থ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। এ রকম বৃষ্টির সময় জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ে বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এ বিশ্বাস থেকে শব্দটির উৎপত্তি। ২. দাদখানি: অর্থ- অতি উৎকৃষ্ট এক ধরনের চালবিশেষ। কথিত হয়, বাংলার সুলতান দাউদ খাঁর শাসনামলে বঙ্গদেশে এর চাষাবাদ শুরু হয়। ৩. নিশিকুটুম্ব: অর্থ- চোর, তস্কর। রাত্রিবেলা যে আত্মীয় (ব্যাঙ্গার্থে) চোর তস্করের মত বেড়াতে আসে।

বাংলা শব্দে পুরুষাধিপত্য ও যৌনতা / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

বাংলা  (নামবাচক শব্দে )শব্দে পুরুষাধিপত্য ও যৌনতা পুত্র শব্দের ব্যুৎপত্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘পুৎ’ নামক নরক থেকে উদ্ধার করে বলে ছেলে সন্তানের নাম পুত্র। তা হলে কন্যার ব্যুৎপত্তি কী? সে কাউকেই ত্রাণ বা উদ্ধার করতে পারে না, বরং তার কাছ থেকে জন্মদাতা ত্রাণ চায়। কন্যার মতো শব্দটিকেও কামনার রেশ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মহাভারতে ব্যাসদেবের ব্যাখ্যা দেখুন : সর্বান্ কাময়তে যস্মাৎ (৩.৩০৬.১৩)। এর অর্থ ‘কন্যা মানে ‘কাম্যা’। কন্ আর কম্ কুটুম্ব ধাতু। ‘ভগিনী’ শব্দটির অর্থ ভগাযুক্ত, অনেকে সরাসরি স্ত্রীচিহ্ন-ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করেন। আলংকারিক কবি দণ্ডী ভগিনী শব্দকে জুগুপ্সাব্যাঞ্জক বলেছেন, সাহিত্যে শব্দটির ব্যবহার থেকে বিরত থাকতেও বলেছেন - ভগিনী-ভগবত্যাদি গ্রাম্যকক্ষাং বিগাহতে।  পুরুষের সমকক্ষ হয়েও কন্যা কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদের দাবিদার হবে তা ছিল কল্পনারও বাইরে। এ জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ, প্রেসিডেন্ট, চেয়ারম্যান, মন্ত্রী ইত্যাদির স্ত্রীলিঙ্গের কথা ভাবাই হয় নি। ভার্যা নামটাই অবমাননাকর। তার উপর যৌনতা আরোপিত হওয়ায় ‘ভার্যা’ যখন পুত্র উৎপাদনের যন্ত্র ( পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা) হয়ে দাঁড়ায় তখন সত

গরু মেরে জুতো দান/ ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

গরু মেরে জুতো দান ইংরেজিতে To rob peter to pay Paul বাগ্‌ভঙ্গির অর্থ একজনের কাছ থেকে নিয়ে অন্যজনকে দেওয়া। তবে বাংলায় এর অর্থ গরু মেরে জুতো দান। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডে ওয়েস্টমিনিস্টারের St. Peter Church-কে St. Peter’s Cathedral - এ পরিণত করা হয়। এ সময় St Paul’s Cathedral এর আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ ক্যাথিড্রালটি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড়। এ দুরবস্থা কাটিয়ে তোলার জন্য - St. Peter’s Cathedral এর ফান্ড থেকে অর্থ নিয়ে St Paul’s এর আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধন করা হয়। এর থেকে এ প্রবাদটির জন্ম। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশের প্রশাসনে এমন ব্যবস্থা দেখা যায়। দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করার জন্য সরকার অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের অর্থ প্রদান করে।

ঘটি-বাঙাল রেষারেষি / ড. মোহাম্মদ আমীন

ঘটি-বাঙাল রেষারেষি জ্যোতিভূষণ চাকী তাঁর ‘বাগর্থকৌতুকী’ গ্রন্থে লিখেছেন, “ঘটি-বাঙালের পারস্পরিক রেষারেষি সুপ্রাচীন। এ-বাংলা ও-বাংলাকে তেমন প্রীতির চোখে দেখত না। বিয়ে শাদির ব্যাপারও এড়াতে চেষ্টা করত।” প্রমাণস্বরূপ তিনি বলেন, সরহপাদের একটি দোহায় আছে- বঙ্গে জায়া নিলেসি পরে ভাগেল তোহর বিণাণা। অর্থাৎ বঙ্গে (= পূর্ববঙ্গে) যখন বিয়ে করেছিস তোর বুদ্ধিসুদ্ধি সব লোপ পেল বলে (বিণাণা চিত্তবান অর্থাৎ সু-চেতনা)। ভুসুকপাদেও দেখছি - আদি ভুসুক বঙ্গালী ভইলী ণিঅ ঘরণি চণ্ডালী লেলী। অর্থাৎ ভুসুক বঙ্গালীকে যেদিন নিজের গৃহিণী করলেন সেদিন তিনি বাঙালি বনে গেলেন অর্থাৎ বঙ্গালসুলভ ভ্রষ্টাচারের ফাঁদে পড়লেন। ভারতীয় জি-বাংলা চ্যানেলে প্রচারিত ‘বয়েই গেল’ নাটকে ঘটি-বাঙালি রেষারেষির কিছু চিত্র পাওয়া যায়। ঘটি এসছে ‘বন্দ্যঘটী’ থেকে। আদি রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণদের উপাধি ছিল ‘বন্দ্যঘটী’। বন্দ্যঘট’ গ্রামের নাম থেকে ‘বন্দ্যঘটী’ উপাধি এসেছে। বন্দ্যঘটে বাস যার সে ‘বন্দ্যঘটীয়>বন্দ্যঘটী’। ‘বন্দ্যঘট’ এর অপভ্রংশ বাঁড়র (বন্দ্যঘট> বন্দহড়>বন্দঅড়>বাঁড়ড়> বাঁড়র)। বাঁড়ুর্জে বা বাঁড়ুজ্জে- এর উৎপত্তিও বাঁড়র থেকে। ঘটী প্রথমে

‘চার্মিং গার্ল’ মানে ডাইনি / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

‘চার্মিং গার্ল’ অর্থ ছিল ডাইনি Charisma শব্দের উৎস গ্রিক। গ্রিক Charis মানে gift বা gracel gift, অর্থ দাঁড়িয়েছে ‘ঈশ্বর যে ক্ষমতা কাউকে দিয়েছেন’ আর grace হল `ঈশ্বরের করুণায় পাওয়া শক্তি'। শব্দটির মূল অর্থে অলৌকিকতার উপস্থিতি তো ছিলই, সে সঙ্গে যুক্ত ছিল magic বা charm- এর অর্থ। অবশ্য পূর্বে charm বলতে সম্মোহন বা সম্মোহন শক্তি বোঝাত। চতুর্দশ শতকে ইংল্যন্ডে charming girl মানে ছিল dangerous girl having magical power to seduce, সোজা কথায় charming girl অর্থ ছিল ড াইনি। আরও পরিষ্কারভাবে বললে বলতে হয়, জার্মান উপকথায় বর্ণিত Lorelei এর মতো ডাইনি, যে রাইন নদীর দক্ষিণ তীরে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে তার রূপ ও সম্মোহক শক্তিতে নাবিকদের আকৃষ্ট করে তাদের প্রাণ নাশ করত। এখন যেমন সব মেয়েই charming girl হতে চায় কিন্তু তখন কোন মেয়েই তা চাইত না। কারণ কোন মেয়েই ডাইনি হতে চাইত না। সপ্তদশ শতক থেকে charming শব্দটার অর্থ পরিবর্তন হতে শুরু করে। তার সঙ্গে চালু হয়ে যায় charismatic শব্দটিও। এখন রাজনীতিক নেতার প্রভার বিস্তারের অসাধারণ ক্ষমতাকে বোঝাতে charismatic এবং অসাধারণ মোহনীয় রমণী বোঝাতে charmi

বুলেট থেকে ব্যালট / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

বুলেট থেকে ব্যালট ========= কথিত হয়, প্রাচীন গ্রিসে বিশ্বের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে কালের নির্বাচনসমূহে সাদা-কালো বুলেট (bullet) বাক্সে ফেলে ভোট দেওয়া হত। এখনকার মতো কাগজের ব্যালট ছিল না। সমর্থক ভোটারগণ ফেলতেন white-bullet আর বিপক্ষতা বোঝাতে ফেলা হত black-bullet। গ্রিসের এ black-bullet হতে ইংরেজি back-balling বাগ্‌ভঙ্গিটির উৎপত্তি। জর্জ স্ট্যানলির লেখায় bullet দ্বারা ভোট দেওয়ার সাক্ষ্য পাওয়া যায়; তিনি লিখেছেন : . . . they gave their choice by bullet। আসলে bullet শব্দের শব্দের মূল ও আদি অর্থ ছিল ছোট বল। ইংরেজি ভাষায় এসে bullet নিজেকে সামান্য পরিবর্তন করে ballot হয়ে যায়। এ ballot শব্দের অর্থও ছিল ছোট বল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বুলেট ও ব্যালটের সম্পর্ক জন্ম থেকে অবিচ্ছেদ্য। হয়তো এ জন্য এখনও অনেক দেশে বুলেট ব্যালটকে নিয়ন্ত্রণ করে; যদিও আধুনিক বুলেট ও ব্যালটের আকাশ-পাতাল তফাত। ব্যালট কাগজের কিন্তু বুলেট ধাতুর তৈরি বলে হয়তো শাক্ত-ঘরিষ্ঠ দেশসমূহে বুলেটের শক্তি ব্যালটের চেয়ে বেশি।

নজরুল রচনায় ব্রজ-/ ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

নজরুল রচনায় ব্রজ- (ব্রজগোপী, ব্রজধাম, ব্রজনারী, ব্রজদুলাল, ব্রজপুর, ব্রজবধু, ব্রজবালা, ব্রজবুলি, ব্রজরাজ, ব্রজরস) ************************************************************************** ‘ব্রজ’ হিন্দুধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মথুরার নিকটবর্তী একটি গ্রাম। এ গ্রামে কৃষ্ণ তাঁর বাল্যকাল অতিবাহিত করেছেন। উদাহরণ : ব্রজের গোপাল! সেদিন ভুলিব/ আমার প্রাণের ব্যাথা। [নজরুল গীতি অখণ্ড, গান (ভক্তি-গীতি, পঙ্‌ক্তি ১৭-১৮)]। ‘গোপী’ গোপনারী, গোয়ালিনী, গোপবধু। উদাহরণ : গোপিনীরা ধেয়ে আসে পাগলি নী হয়ে [ নজরুল রচনা সম্ভার, ৪র্থ (আবদুল কাদির সম্পাদিত]। সুতরাং : ব্রজগোপী : ব্রজের গোপনারী, ব্রজের গোপবধু। উদাহরণ : সেই ব্রজগোপীদের ঘর আছে, পর আছে/ কৃষ্ণ বিনা নাই রাধার কেহ। [ নজরুল গীতি অখণ্ড, গান (ভক্তি-গীতি ১১৬৭, পঙ্‌ক্তি ১৩-১৪]ব্রজধাম : বৃন্দাবন, গোকুল। উদাহরণ : কৈলাসে তাই মাকে ডাকি/ দেখব সেথায় ব্রজধাম [নজরুল রচনাবলী, ৪র্থ (আবদুল কাদির সম্পাদিত), গান ৬৫, পঙ্‌ক্তি ১৫-১৬] ব্রজনারী : গোপনারী, গোপবধু। উদাহরণ : মুরলী-ধ্বনি শুনি ব্রজনারী/যমুনা-তটে আসিল ছুটে,[নজরুল রচনাবলী, ৪র

কালো মেয়ের আলো/ আসকর আলী পণ্ডিত

কালো মেয়ের আলো আসকর আলী পণ্ডিত ======== আধাঁর প্রগাঢ় স্বপ্ন-বিলাস নিবিড়-পরম বাঁধন কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখি আলোর নাচন নিকষ কালো চুলগুলো তার, জড়িয়ে থাকে কালো অপার নয়ন বাণে নিকষ ঘোরে এশার স্ফুরণ কালো মেয়ের পায়ে দেখি রূপালী অরুণ। নয়ন মাঝে কালো মণি, মিটমিটিয়ে উঠে রনি জগত আমার ভোর করে দেয় কৃষ্ণ চুলের বন কালো মেয়ের পায়ের তলায় আলোয় মগ্ন ক্ষণ।

ভাত এল যেভাবে / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

ভাত কারও মতে সংস্কৃত ‘ভক্ত’ থেকে প্রাকৃত ‘ভত্ত’ এবং সেখান থেকে ‘ভাত’ শব্দের জন্ম। আবার অনেকে মনে করেন ‘ভাতার’ শব্দ থেকে ‘ভাত’। বিষয়টা পর্যালোচনা করা যাক। ‘ভাত’ বলতে সে সব বিষয় বা বস্তু বুঝায় যা অন্নরূপে শোভা পায়। সিদ্ধ তণ্ডুল, অন্ন, অন্নপ্রাশন, জীবিকা, দীপ্তি পাওয়া, প্রকাশ পাওয়া, শোভা পাওয়া প্রভৃতি অর্থও শব্দটি প্রকাশ করে। ‘ভাত’ এর সঙ্গে ‘ভাতা, ভাতার, ভাতারকামড়া, ভাতার খোর, ভাতারখাগী, ভাতারনড়, ভাতারী’ প্রভৃতি শব্দের সম্পর্ক বেশ নিবিড়। ভাতা = ‘ভাত’-এর আধার যাতে; বেতন ব্যতিরেকে কর্মচারীদের অন্যত্র যাতায়াত ইত্যাদির জন্য প্রদেয় বৃত্তিকেও ‘ভাতা’ বলে; এর সঙ্গেও ভাতের সম্পর্ক রয়েছে। ভাতার = ভাতা রয় যাতে; পতি অর্থেও ভাতার (স্ত্রীভাষায়) প্রচলিত, কারণ পতি ‘ভাত’ দেয়।। ভাতারী = ভাতারকে সক্রিয়ভাবে ধারণ করে যে, ভাতারের স্বামী বা যে ‘ভাত’ দেয় তার আধার। ‘ভাতারকামড়া’ শব্দটি প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায়। এর অর্থ, যে স্ত্রী ভাতারকে কামড়িয়ে থাকে অর্থাৎ ছাড়তে চায় না। ‘ভাতারখোর’ বলতে বুঝায়, সে স্ত্রী, যে ভাতার (স্বামী) এর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল এবং ভাতার ভিন্ন আর কোন উপায় নেই; তাই ভা

নটে গাছটি মুড়ালে, গল্প আমার ফুরালো / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

 নটে গাছটি মুড়ালে, গল্প আমার ফুরালে এককালে দাদি-নানি, মহিলা মুরুব্বি বা কাজের মহিলা (তৎকালে গৃহস্থ বাড়িতে যারা কাজ করতেন তাদের একটা মর্যাদা ছিল, বর্তমান কালের মতো এত অবহেলা করা হত না।) মাছ-মাংস, তরি-তরকারি বা শাক-সব্জি কুটতে কুটতে শিশুদের গল্প শোনাতেন; বা গল্প শুনিয়ে তাদের শান্ত রাখতে হত। তরকারির মধ্যে সাধারণত শাকটি সবার শেষে কুটার জন্য নেওয়া হত। সেকালে নটে শাক ছিল যেমন সহজলভ্য, তেমনি উপাদেয়। প্রায় বেলা প্রত্যেক সাধারণ গৃহস্থের বাড়িতে এ শাকটি রান্না করা হত। এমন অনেক সময় ঘটত যে, তরকারি কুটা শেষ হয়েছে কিন্তু গল্পটি শেষ হয় নি বা একটি গল্প শেষ হলেও শিশুরা আরও একটি নতুন গল্প বলার জন্য বায়না ধরেছে অথবা কাজ তরকারি কুটা শেষ হওয়ার আগে গাল্পিকের গল্প বলার ইচ্ছা বা স্মৃতি আর সাড়া দিচ্ছে না। তখন বলা হত, আমার শাক কুটা শেষ অর্থাৎ কাজ শেষ, তাই গল্পও শেষ। ‘নটে গাছটি মুড়ালো’ মানে নটে গাছ থেকে পাতা (শাক) নিয়ে গাছটিকে পাতাশূন্য (মুড়া) করে ফেলা; অর্থাৎ শাক কুটা শেষ হয়েছে। বস্তুত ‘নটে গাছটি মুড়ালো’ বাগ্‌ভঙ্গিটি এখানে কার্যক্ষেত্র থেকে প্রতীকি অর্থে নিয়ে আসা হয়েছে। এর অর্থ ব

অনুদিত, অনূদিত, অনুবাদিত / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

অনুদিত/অনূদিত/অনুবাদিত ‘অনুদিত’ ও ‘অনূদিত’ দুটো ভিন্ন শব্দ কিন্তু উচ্চারণ অভিন্ন। ভালোভাবে খেয়াল না-করলে বানানের পার্থক্যও সহজে চোখে পড়ার মতো নয় কিন্তু অর্থে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ‘অনুদিত’ শব্দের অর্থ যা উদয় হয় নি। যেমন : অনুদিত চাঁদ/ জ্যোস্না নাহি সাথ। অন্যদিকে ‘অনূদিত’ শব্দের অর্থ ভাষান্তরিত। যেমন: ‘আহমদ ছফা অনূদিত ‘ফাউস্ট’ বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ জগতে এক কালজয়ী সংযোজন। ‘অনুবাদিত’ শব ্দের অর্থ ‘অন্যের দ্বারা অনূদিত’। উদাহরণ : বিজ্ঞ বিচারক ল্যাটিন ভাষায় লিখিত দলিলগুলোর অর্থ অনুধাবনের সুবিধার্থে অনুবাদিত দলিল উপস্থাপনের নির্দেশ দিলেন। ‘অনুবাদিত’ শব্দের আর একটি প্রয়োগ দেখুন : ইংরেজি গীতাঞ্জলির (Song Offerings) অধিকাংশ গান রবীন্দ্রনাথ-অনূদিত, তবে কয়েকটি গান ব্রাদার জেম্‌স ও জো উইন্টার অনুবাদিত। কথোপকথন ভক্ত : আপনার লেখা কাব্য এবং আপনারই দ্বারা অনূদিত, দারুণ তো! কবি : না, এটি আমার দ্বারা অনূদিত নয়, অনুবাদিত। ভক্ত : অনুবাদিত মানে কী? কবি : কাব্যটি আমার বন্ধু রবার্ট গিট অনুবাদ করেছেন। অর্থাৎ রবার্ট গিট অনূদিত

দাদখানি / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

দাদখানি ‘দাদখানি’অতি উৎকৃষ্ট মানের এক প্রকার চাল। কথিত হয়, বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান দাউদ খানের (১৫৭৩-১৫৭৬) আমলে বঙ্গদেশে এ চালের চাষাবাদ শুরু হয়। সুলতানের দরবারে চালটির বেশ চাহিদা ছিল। দাউদ খান নিজেও চালটি পছন্দ করতেন। তাই এর নাম হয়ে যায় দাউদখানি চাল> দাদখানি চাল। শিশুকালে পড়া কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার (১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ ; ১২ কার্তিক ১২৭৩ বঙ্গাব্দ - ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ ; ১২ আষাঢ় ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) এর ‘কাজের ছেলে’ কবিতায় বর্ণিত ‘দাদখানি চাল’ এখনও স্মৃতিকে উদ্বেল করে তোলে। ----------- ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------ [দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ, দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ। পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল; ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল। দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ, দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ। বাহবা বাহবা – ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ! দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ। দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা

সসেমিরা শব্দের অর্থ ও ব্যুৎপত্তি / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

সসেমিরা ‘সসেমিরা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘বাহ্যজ্ঞানশূন্য, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হতভম্ব, প্রায় প্রতিকারহীন অবস্থা ’। এটি সংস্কৃত কবি কালিদাসের দ্বাত্রিংশপুত্তলিকা নাটকে বর্ণিত চারটি রহস্যময় শ্লোকের প্রত্যেকটির আদ্যাক্ষরের সমষ্টি। কথিত হয়, রাজা বিক্রমাদিত্যের বত্রিশ সিংহাসন এবং ভোজরাজাকে নিয়ে পৌরণিক উপাখ্যান ‘দ্বাত্রিংশপুত্তলিকা’য় অভিশাপগ্রস্ত রাজপুত্র জয়পালের পিশাচ অবস্থা প্রাপ্তির পর হতবুদ্ধি অবস্থায় আপন মনে ‘সসেমিরা’ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন। এ স্বগোতোক্তি থেকে ‘সসেমিরা’ শব্দটির উৎপত্তি। যা আধুনিক বাংলায় ‘বাহ্যজ্ঞানশূন্য, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হতভম্ব, প্রায় প্রতিকারহীন অবস্থা প্রভৃতি বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

জবাব : অনিন্দ্য বড়ুয়া -শুবাচ

Image
অনিন্দ্য বড়ুয়া মাথায় কত প্রশ্ন আসে, শুবাচে মেলে জবাব তার, কেউ বলে না মিথ্যেবাজি  বকিস নে আর খবরদার ! সবাই শেখায় সবাই শেখে আমাদের এই শুবাচ থেকে ভাষার সুবাস ছড়িয়ে শুবাচ হাজারে হাজার প্রশ্ন যত আসুক শুবাচ জবাব দেবে তার।  

ইকড়ি মিকড়ি : অসাধারণ অর্থপূর্ণ একটি ছড়া / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

ইকড়ি মিকড়ি : অসাধারণ অর্থপূর্ণ একটি ছড়া ইকড়ি মিকড়ি চাম-চিকড়ি, চামের কাঁটা মজুমদার। ধেয়ে এল দামোদর দামোদরের হাঁড়ি-কুঁড়ি। দাওয়ায় বসে চাল কাঁড়ি। চাল কাঁড়তে হল বেলা, ভাত খাওগে দুপুরবেলা। ভাতে পড়ল মাছি, কোদাল দিয়ে চাঁছি। কোদাল হল ভোঁতা খা কামারের মাথা। অনেক আগে ছড়াটি মুখস্থ করেছি কিন্তু অর্থ জানতাম না। শিক্ষক বলতেন, ‘অর্থহীন, শিশুদের মজার জন্য রচিত।’ কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ থেকে ছড়াটির অর্থ উদ্ধার করেছি । ছড়াটি অর্থহীন নয়। ছড়াকার অসাধারণ দক্ষতায় চিরন্তন বাংলার সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তুলে ধরেছেন। প্রাচীন বাংলার মতো এখনও সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা অভিন্ন রয়ে গেছে। একটুও পরিবর্তন হয় নি। একটি ছোট্ট ছড়ায় ছড়কার কীভাবে চিরন্তন বাংলাকে কালজয়ী ভাষায় তুলে ধরেছেন দেখুন : ইকড়ি : গতিশীলভাবে কর্মফল সংগ্রহ করি [অর্থাৎ সংসার পরিপালনের জন্য সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করি]। মিকড়ি : সীমায়িত কর্মফল সংগ্রহ করি [অর্থাৎ তারপরও হয় না, তাই আরও কিছু উপর্জনের চেষ্টা করি]। চাম : (আমাদের) চড়ে বেড়ানোর বা রুজিরোজগারের এলাকায়। চিকড়ি : (ঘুরে ঘুরে) কর্মফল

বাংলা শব্দ ‘অল্প’ থেকে ইউরোপের alps ও সুইজারল্যান্ডের ‍alpes / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

বাংলা শব্দ ‘অল্প’ থেকে ইউরোপের alps ও সুইজারল্যান্ডের ‍alpes ঈষৎ, কিঞ্চিৎ, পরিমিতবিষয়ক, অকিঞ্চিৎকর, লঘু, সামান্য, পরিমিত, less বা কম অর্থ বোঝাতে; সীমায়িত বস্তু বা ব্যাপার, যার বৃদ্ধি বা বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ আছে, বারণ করা আছে, তাই অল্প অর্থাৎ ঈষৎ কম- প্রভৃতি অর্থ বোঝাতে ‘অল্প’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বহু কারখানায় মালিকের ইচ্ছেমতো উৎপাদন করার অধিকার নেই। কত উৎপাদন করা হবে তা সরকার বলে দেয় অথবা সরকারের নিকট থেকে অনুমতি নিতে হয়। ফলে তাদের উৎপাদন অল্প; একালের ভাষায় sanctioned বা সীমিত পরিমাণ। এ রকম বিষয়কে পূর্বে ‘অল্প’ বলা হত, পরে তা প্রাসঙ্গিক বিষয় ছাড়িয়ে অপ্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে যায়। স্মর্তব্য, ‘অল্প’ কিন্তু কম নয়, কম- এর চেয়ে বেশি। বঙ্গীয় শব্দার্থকোষে কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী ‘অল্প’ শব্দের বিবর্তন ও আন্তর্জাতিকতার চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, “alp = অনতি-উচ্চ পর্বত বা অল্প-পর্বত। হিমালয়ের তুলনায় সুইজারল্যান্ডের পাহাড় অনতি-উচ্চ বা অল্প সেজন্যই ল্যাটিন ভাষায় তাকে alpes এবং ইংরেজি ভাষায় alps বলা হয়েছে। হতে পারে প্রাচীনকালে হিমালয়-দ্রষ্টা ভারতের

রবীন্দ্রালো / তাসমিনা হোসেন- শুবাচ

 রবীন্দ্রালো "ইচ্ছে করে জীবনের প্রত্যেক সূর্যোদয়কে সজ্ঞানভারে অভিবাদন করি এবং প্রত্যেক সূর্যাস্তকে পরিচিত বন্ধুর মতো বিদায় দিই। " অনেক আপনজনের মৃত্যুর সাক্ষী রবীন্দ্রনাথের মত মহান মানুষ প্রকৃতির নিয়মকে এভাবেই স্বাগত জানায়। আমার বয়স বাড়ার সাথে রবীন্দ্রনাথকে ভিন্ন আঙ্গিকে জানছি। আর যতই জানছি, ততই এক দুর্নিবার আকর্ষণ বেড়েই চলেছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আরও অনেক কবিই রবীন্দ্রনাথের গানকে দুর্বল রচনা বলেছেন। সাহিত্যমুল্য আমি বুঝি না। আমার অনেক কষ্টে এই গান আমায় আশ্রয় দেয়। আমার ভেতরে চেপে থাকা অনেক কষ্ট এই গানের সাথে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে! অনেক বিপদেও আমাকে সাহস দেয়। যদিও আমার ভানুর মত আমি নির্ভীক চিত্তে বলতে পারি না "বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা। বিপদে আমি না যেন করি ভয়। " অসুস্থ কন্যা রেনুকাকে রোজ দু'বেলা কবিতা পড়ে শোনানো, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মেয়েকে উৎসর্গ করে 'শিশু' রচনা করা এ বুঝি তাঁর মত বড় মানুষেরই সাজে। কত অপমান সহ্য করেছেন কন্যা জামাতা শরৎ বসুর কাছে। অথচ শরৎ বসু ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পর

বাংলাদেশের নদী / চয়ন চক্রবর্তী - শুবাচ

Image
বাংলাদেশের নদী বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। শাখা- প্রশাখাসহ প্রায় ৭০০ নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকাই শত শত নদীর মাধ্যমে বয়ে আসা পলি মাটি জমে তৈরি হয়েছে। পদ্মা নদী পদ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। এটি হিমালয় পর্বতে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা। এটি ভারত থেকে বাংলাদেশে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা হয়ে প্রবেশ করেছে। আরিচাতে এটি যমুনা নদীর সাথে মিশেছে, এবং পদ্মা নামেই পরে চাঁদপুরে মেঘনার সাথে মিশেছে। অত:পর মেঘনা বঙ্গোপসাগরে শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর রাজশাহী এই পদ্মার উত্তর তীরে অবস্থিত। মেঘনা নদী মেঘনা নদী বাংলাদেশ এর একটি অন্যতম প্রধান নদী। পূর্ব ভারতের পাহাড় থেকে উদ্ভূত মেঘনা নদী সিলেট অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চাঁদপুরের কাছে পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগর এ প্রবাহিত হয়েছে। হালদা নদী হালদা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী। পার্বত্য চট্টগ্রামের বদনাতলী পাহাড় হতে উৎপন্ন হয়ে এটি ফটিকছড়ির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় প্

শুবাচের কাছে প্রত্যাশা / বিধুভূষণ ভট্টাচার্য- শুৃবাচ

 শুবাচের কাছে প্রত্যাশা ''তোমার ডাক শুনে সাঁই চলতে না পাই/রুখে দাঁড়ায় গুরুতে মুর্শিদে''-------- ফকির লালন শাহ্ বাংলার পথে চলতে পথের দিশা দেবে বাংলা একাডেমি। কিন্তু ওদের দেখানো পথে চলতে গিয়ে প্রায়ই খেতে হয় হোচট, চোখ রাঙানি, ধমক। বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমি বাংলা বানান অভিধান, বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ, বাংলা লেখক ও সম্পাদকের অভিধান ইত‌্যাদিসহ কোন্ বইয়ে কোন্ শব্দ আর কোন্ বানান যে কখন শুদ্ধ তা বুঝে উঠা আমার মত সাধারণের পক্ষ প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংল া ভাষার সর্বজনগ্রাহ্য নিয়মকানুন আজও পাই নি, নানা মুনির নানা মত। অভিধানে থাকলেই শব্দ শুদ্ধ নয়/ না থাকলেই অশুদ্ধ নয়। হাজারটা নিয়ম।আর সকল নিয়ম মুখস্থ করে বুঝেশুনে শুদ্ধ শব্দ স্থির করে লেখার বিদ‌্যা অর্জনও সাধারণের জন্য সহজ নয়। তাই, শুবাচ কর্তৃপক্ষ ও উপদেষ্টামণ্ডলির কাছে চাই সহজ সমাধান! ১. প্রমিত শুদ্ধ বানানে শুদ্ধ বাংলা শব্দের একটি অভিধান/তালিকা দিন, যেটাকে কেউ দোকান বলবে না! নতুবা ২. 'বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধ

বিষ্ঠা, উচ্ছিস্ট ও বমন / সানোয়ার রাসেল - শুবাচ

 বিষ্ঠা, উচ্ছিস্ট ও বমন কোন এক পণ্ডিত কবি বলেছিলেন :  কাক বিষ্ঠাঃ মৃতাবস্ত্রং শিবনির্মাল্যমেবচ উচ্ছিষ্টং বমনষ্ণৈব পবিত্রাণি যুগে যুগে।। সাদা চোখে এর মানে দাঁড়ায় কাকের বিষ্ঠা, মৃতের বস্ত্র, শিবনির্মাল্য, উচ্ছিষ্ট ও বমি যুগে যুগে পবিত্র! হয়তো ভাবছেন এ আবার কেমন উদ্ভট কথা! আসলে ধাঁধাঁ বা শ্লোকের ঠিক অর্থটি বের করতে হলে অনেক বিকল্প অর্থ মাথায় রেখে এগুতে হয়। কাকবিষ্ঠা দিয়ে বটগাছও বুঝায়। কাক বটফল খেয়ে নানা বৃক্ষে, অট্টালিকায়, মাঠে ময়দানে মলত্যাগ করে। তাতে যে সব অজীর্ণ বটফলের বীজ থাকে তা থেকে আবার গাছ হয়। এজন্যই বটগাছকে কাকবিষ্ঠা বলে। রেশমের গুটির মধ্যে কীট মরে থাকে, আর সেই গুটি থেকে সুতো বের করে বস্ত্র বোনা হয়, সুতরাং রেশমী কাপড় হল মৃতের বস্ত্র। আর শিবনির্মাল্য তো পবিত্র বটেই। বাছুর আগে বাঁট টেনে দুধ খায় তারপর সেই দুধ দোহন করা হয়, তাই দুধ হল উচ্ছিষ্ট। মৌমাছি নানা ফুল থেকে রস নিয়ে চাকে রাখে, তাই মধুকে বমন বলা হয়েছে। অর্থাত্‍ শ্লোকটির প্রকৃত অর্থ হবে বটগাছ, রেশমী কাপড়, শিবনির্মাল্য, দুধ ও মধু চিরদিনই পবিত্র। এখন একটা ধাঁধাঁ বলি, দেখি কে ভাঙাতে পারেন। কাক বিষ্ঠায় শু

রবীন্দ্রনাথে জন্মদিনে শুবাচের শ্রদ্ধাঞ্জলি / শুবাচ এডমিন

Image
রবীন্দ্রনাথে জন্মদিনে শুবাচের শ্রদ্ধাঞ্জলি রবীন্দ্রনাথ চিরন্তন বরাভয়, জীবনের অনুবাদ। শ্রদ্ধা তোমায় কবি, মুকলিত পুষ্প, বাংলার ছবি। [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ই মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ খ্রি.)(২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)]

শুদ্ধ বানান চর্চা ও একটি গল্প / বিজিত কুমার ভট্টাচার্য -শুবাচ

Image
 শুদ্ধ বানান চর্চা ও একটি গল্প `শুদ্ধ বানান চর্চা'--পড়ছি। পড়তে পড়ে একটা গল্প মনে পড়ে গেল। অনেকে পুরানো গল্প, অনেকে জানেন। তবু আবারও বলছি। এক গ্রামে ছিল এক নাপিত। চুল কাটার পাশাপাশি সে ডাক্তার/সার্জনের কাজও করত। বিশেষ করে ফোঁড়াটোড়া হলে ধারলো ক্ষুর দিয়ে ঘচাঘচ অপারেশন! দ্রুত নিরাময়! একসময় গ্রামে বড় ডাক্তার আসলেন। তিনি নাপিতকে এনাটমি শেখানোর চেষ্টা করলেন। মানুষের শরীরে জালের মতো রক্তনালী, লক্ষকোটি কোষ ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর হলো কী---নাপিত আর অপারেশন করতে পারে না। তার হাত কাঁপে। কখন শিরা/ধমনি কেটে যায়! আমার অবস্থাও ঐ নাপিতের মতো। আগে ঘচাঘচ বাংলা লিখতাম। এখন লিখতে গেলে হাত কাঁপে। কখন বানান ভুল হয়ে যায়! এভাবে কাঁপাকাঁপির মধ্য দিয়েই পরিশুদ্ধ হব। শুবাচের সকলকে ধন্যবাদ।

আমি মারের সাগর পাড়ি দেব / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

আমি মারের সাগর পাড়ি দেব : শরীফ উদ্দিন প্রশ্ন করেছেন : "আমি মারের সাগর পাড়ি দেবো ... " এটা কোন সাগর কেউ বলবেন কি ? খুরশেদ আহমেদ : এখানে ‘মারের সাগর’ বলতে আমি বুঝি একটি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সাগর যা পাড়ি দেওয়া জীবনযুদ্ধের সাথে তুলনীয়। শরীফ উদ্দিন : নামটা এলো কোত্থেকে বা কি করে ? আজ প্রশান্ত মহাসাগরের তীর ঘেঁষে Del Mar ( San Diego, CA)পার হয়ে যেতে যেতে এই কথাটা মনে এল। 'মার" শব্দটার আক্ষরিক মানেও হচ্ছে সাগর। খুরশেদ আহমেদ : "'মার" শব্দটার আক্ষরিক মানেও হচ্ছে সাগর। হাজী রফিক : ইটালিয়ানো'তে 'মার' বলে সাগরকে। অনেক বাঙ্গালিকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছি যে ওরা 'মারে' তীরে দোকানদারি করে। সিজন শেষে শহরে চলে আসে। গুরুদেবের সাথে মুসোলিনির সুসম্পর্কের কথা জানা যায়। ডিটেইল লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ 'মধ্যাহ্ন' উপন্যাসে। মুসোলিনি শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠায় গুরুদেবকে অনেক দাক্ষিণ্য দিয়েছেন। গুরুদেব বিনিময়ে প্রশস্তি করেছেন তার; এমনকি 'দার্শনিক রাজা'র অবয়ব দেখেছেন তার মাঝে। মুসোলিনিকে খুশি করতে গিয়ে গুরুদেব একটি বাংলা গানে এই ইটালিয়ানো শব্দ ঢ

ড. মোহাম্মদ আমীনের বই

Image
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা কয়েকটি বইয়ের ছবি এখানে দেওয়া হল।